Toggle navigation SEARCH FOR PROPERTY
আমাদের দেশে বিশেষ করে শহর এলাকায় বাড়ীওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার দ্বন্দ্ব ক্ষেত্র বিশেষে এমন প্রকট আকার ধারণ করে যে তা চুরি ডাকাতির মামলা এমনকি নারী নির্যাতন মামলাতে গিয়েও গড়ায়। এ ধরণের ঘটনা ইদানিং অহরহই ঘটছে। বাড়ীওয়ালা ও ভাড়াটিয়া দ্বন্দ্বের প্রধান কারন হোল, তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট ও আইন সম্মত কোন চুক্তিপত্র না থাকা। আবার চুক্তিপত্র থাকলেও দেখা গেলো তা ক্রুটিপূর্ণ। এমন কিছু শর্ত রয়েছে যা আইন সম্মত নয়। বা আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এমন কতক বাড়ীওয়ালা আছেন যারা ভাড়াটিয়ার সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদনে আগ্রহী নন। তাদের ধারণা চুক্তিপত্র না থাকলে ভাড়াটিয়াকে খুব সহজেই উচ্ছেদ করে দেয়া যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী থাকে। আবার এমন বাড়ীওয়ালা আছেন যারা ভাড়াটিয়াকে কোনরূপ ভাড়ার রসিদ দেন না। ভাড়াটিয়াকে দুর্বল সাইডে রাখার মানসিকতায় কিংবা আয়কর ঝামেলা এড়াতে কোন কোন বাড়ীওয়ালা এমনটা করে থাকেন। এর পরিণামও হয় খারাপ। এক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার সাথে সামান্য দ্বন্দ্ব হলেই ভাড়াটিয়া সত্য মিথ্যার মিশ্রণে এমন মামলা ফেঁদে বসেন, যাতে বাড়িওয়ালার কিছু করার থাকে না।
বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে চুক্তিপত্রটি রেজিস্ট্রি করে নেওয়া যেতে পারে। রেজিস্ট্রি না করা হলে সাধারণত এক বছরের জন্য চুক্তি করে নেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। একাধিক বছরের ভাড়ার জন্য অবশ্যই চুক্তিনামা রেজিস্ট্রি করে নিবেন।
১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারামতে, কোন বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক ভাড়া কোনভাবেই আদায়যোগ্য হবে না। এ ক্ষেত্রে মানসম্মত ভাড়া বলতে উপযুক্ত ভাড়াকেই বোঝানো হয়েছে। এ ভাড়া বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে আপোসে নির্ধারিত হতে পারে। আবার ঘর ভাড়া নিয়ন্ত্রকও এ ভাড়া নির্ধারণ করতে পারেন।
বাড়ি ভাড়া পরিশোধে ভাড়াটিয়াকে একদিনের জন্যেও ব্যর্থ হলে চলবে না। অনুরূপভাবে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে ভাড়ার রশিদ পাওয়াও তার অধিকার। বাড়ীওয়ালা ভাড়া গ্রহনের সাথে সাথেই ভাড়াটিয়াকে রশিদ প্রদান করবেন। রশিদ প্রদানে ব্যর্থ হলে ভাড়াটিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কোন বাড়ীওয়ালা তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে এক মাসের অধিক ভাড়ার টাকা অগ্রিম হিসেবে নেওয়া যাবে না, আর সে অগ্রিম বা জামানত যে নামেই চিহ্নিত করা হোক না কেন।
ভাড়াটিয়াকে ইচ্ছেমতো বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যায় না। ভাড়াটিয়া যদি চুক্তিপত্রের কোন শর্ত লংঘন না করেন এবং নিয়মিত ভাড়া পরিশোদ করতে থাকেন তাহলে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করার কোন প্রশ্নই উঠে না। চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হলেও বাড়ীওয়ালা যদি ভাড়া নিতে থাকেন, তাহলে এটাই ধরে নেয়া হয় যে, বাড়ীওয়ালা চুক্তিপত্রটি নবায়ন করেছেন। ভাড়াটিয়া নিয়মিত ভাড়া পরিশোদ করা অবস্থায় যদি বাড়ীওয়ালা তাঁকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেন, তাহলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার ভাড়াটিয়ার রয়েছে।
বাড়ীওয়ালা বেশ কিছু কারণে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে পারেন। সাধারণত বাড়িভাড়া আইনের আওতায় যেসব কারণে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যায়, তা হল-
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১০৬ ধারা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে। বাসাবাড়ি, দোকানঘর, অফিস, গুদাম প্রভৃতি যদি মাসিক ভাড়ায় ব্যবহার করা হয়, সে ক্ষেত্রে ১৫ দিনের নোটিশে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যায়। চুক্তি যদি বার্ষিক ইজারা হয় বা শিল্পকারখানা হয় সেক্ষেত্রে ৬ মাসের নোটিশে উচ্ছেদ করা যায়।
আইনে ঘর ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ভাড়া নিয়ন্ত্রক রয়েছে। সাধারণত সিনিয়র সহকারী জজ আদালতগুলো এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বাড়ীওয়ালা ভাড়া গ্রহনে অস্বীকৃতি জানালে ভাড়াটিয়াকে চুক্তি অনুযায়ী সময়ের মধ্যে কিংবা চুক্তি না থাকলে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে মানি অর্ডারযোগে বাড়িওয়ালার ঠিকানায় ভাড়া প্রেরণ করতে হয়। মানি অর্ডার যোগে প্রেরিত ভাড়াও যদি বাড়ীওয়ালা গ্রহণ না করেন, তাহলে মানি অর্ডার ফেরৎ আসার ১৫ দিনের মধ্যে ভাড়াটিয়াকে ভাড়া নিয়ন্ত্রক অর্থাৎ সিনিয়র সহকারী জজের বরাবর দরখাস্ত দিয়ে ভাড়া জমা দিতে হবে। এভাবে নিয়মতভাবে ভাড়া জমা দিয়ে যেতে হবে, যতদিন না বাড়ীওয়ালা আপোষে ভাড়া গ্রহণ না করেন। মনে রাখতে হবে যে, এতেও ভাড়াটিয়াকে কোনভাবে ব্যর্থ হওয়া চলবে না। ডিসেম্বর মাস আদালত বন্ধ থাকে বিধায় ঐ মাসের ভাড়া নভেম্বর মাসে অগ্রিম জমা করতে হবে।
Submit