Toggle navigation SEARCH FOR PROPERTY
দেশে জমি কেনা বেচা নিয়ে প্রতারণা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। আপনি যদি জমি কেনার বিষয়ে অভিজ্ঞ না হন তবে আপনাকে ঠকাতে বিভিন্ন দালাল কিংবা বিক্রেতা ছড়িয়ে আছে। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক জমির দাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে বায়না ও জমি হস্তান্তর প্রত্যেকটি প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি।
জমি কেনার প্রথম ধাপেই আসে বায়নার বিষয়। আপনি একজন ক্রেতা হিসেবে একটি জমি কিনবেন এবং বিক্রেতার সম্মতিতে সেই জমি কেনার বিষয়ে আপনি সম্মত হয়েছে, একই সাথে বিক্রেতাও আপনার নিকট জমি বিক্রিতে সম্মত আছে এই মর্মে জমির চৌহদ্দি নির্ধারণ করে উভয় পক্ষের মাঝে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়ে থাকে। একেই বায়না বলা হয়ে থাকে। বায়না নামায় নির্ধারিত অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতার নিকট জমি কেনার জন্য দায়বধ্য থাকেন। দুর্নীতি হয় এই যায়গায়, অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিকরা প্রথমে একজনের সাথে জমি বিক্রয়ের বায়না করে আর পরে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে বেশি দামে অপর একজনের কাছে বায়নাকরা জমি বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়। একই জমি নিয়ে বহু ক্রেতার কাছে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ও সেই অনুযায়ী টাকাও নেওয়া হয়। এভাবেই প্রতারণা করা হয় নিরীহ ক্রেতাদের সাথে।
এ ধরনের প্রতারণা রোধ করার জন্য সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ৫৩খ ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিধান অনুযায়ী ১ জুলাই ২০০৫ থেকে স্থাবর সম্পত্তি (Immovable Property) বিক্রির উদ্দেশ্যে কোনো বায়না করা হলে বায়না বহাল থাকাকালে ওই জমি অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা যাবে না। যদি বিক্রি করা হয় তাহলে ওই বিক্রি বাতিল বলে গণ্য হবে। অতএব, আপনাকে জমি কেনার আগে অবশ্যই খোঁজ খবর নিতে হবে অই জমি বিক্রির জন্য আর কারো সাথে বায়না করা হয়েছে কিনা।
স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে এতোদিন দাতার নামে খতিয়ান না থাকলেও বিক্রয় বৈধ ছিলো, এক্ষেত্রে ওয়ারিশান কিংবা বয়া দলিল বা আদি মালিকের নামের খতিয়ান দেখে ক্রয় বিক্রয় হতো। এক্ষেত্রে প্রতারণা করার সুযোগ হয়। তবে বর্তমানে এই বিধানের পরিবর্তন করা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উক্ত খতিয়ান দলিলদাতার নামে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য নতুন বিধান (ধারা ৫৩গ) সংযোজন করে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে। অতএব, জমি কেনার ক্ষেত্রে বিক্রেতার নামের খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান দেখে কিনুন।
আপনি ক্রেতা, এমন এক জমি কিনে নিলেন যে জমি আরেকজনের নিকট পূর্বে বন্ধক রাখা ছিলো। কেনার পর বন্ধকী জমির সত্ত্ব নিয়ে হাজির আরেক জন! বুঝুন অবস্থা? এমন অবস্থায় আবার ঐ ব্যক্তিকে বন্ধকের বাড়তি অর্থ আপনাকেই পরিশোধ করতে হয়।
জমি বন্ধক সংক্রান্ত জালিয়াতি, প্রতিরোধ করার জন্য আইনে ৫৩ধ সংযোজন করা হয়। এ ধারা অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দেওয়া হলে উক্ত সম্পত্তি বন্ধক গ্রহীতার সম্মতি ছাড়া অপর কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা অথবা বন্ধক দেওয়া যাবে না। যদি বন্ধক দেওয়া বা বিক্রি করা হয়, তবে উক্ত বিক্রি বা বন্ধক বাতিল বলে গণ্য হবে। অতএব, এক্ষেত্রে আপনি না জেনে জমি কিনলেও ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। এবং কেনার আগেই ভালো ভাবে খোঁজ নিন কিনতে যাওয়া জমি আসলেই কোন বন্ধকী জমি কিনা।
স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, বন্ধক ও দানপত্র দলিলের সাথে স্বত্ত্ব সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিতকরণের জন্য কোনো এফিডেভিট যুক্ত করার বাধ্যবাধকতা না থাকায় স্বত্ত্ব বিক্রিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এতে করে ওয়ারিশান সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা হয়ার আগেই কোন ওয়ারিশ নিজের সত্ত্ব নির্ধারিত না করেই বিক্রি করে, ফলে পরে অন্যান্য ওয়ারিশ ঐ অংশে ঝামেলা করে।
দলিলের সাথে স্বত্ত্ব সংক্রান্ত তথ্য বিষয়ক এ জটিলতা নিরসণের জন্য আইনে ৫৩ঙ অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়েছে। এ বিধানানুযায়ী প্রত্যেক বিক্রয়, বন্ধক ও হেবা দলিলের সাথে দলিলদাতার স্বত্ত্ব সংক্রান্ত এফিডেভিট সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ফলে, উপরের বিষয় সমূহ খেয়াল রাখুন এবং একটু সচেতন থাকুন, তবেই জমি ক্রয়ে ঠকে যাওয়া বা প্রতারিত হয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
Submit